
অনলাইন ডেস্ক:
বরিশালে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) মোটরযান পরিদর্শক সৌরভ কুমার সাহা-কে ঘিরে এক ধরনের অপ-তৎপরতার অভিযোগ উঠেছে। অনুসন্ধানে বিষয়টির নেপথ্যে বেশ কয়েকজন স্বার্থান্বেষী মহলের যোগসূত্র পাওয়া গেছে, যারা তার সততা ও পেশাদারিত্বে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে বলে জানা গেছে।
ভিত্তিহীন তথ্য ছড়িয়ে বিভ্রান্তি
সম্প্রতি জাতীয় দৈনিক আমার দেশ ও বরিশালের কয়েকটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে প্রকাশিত “১১ বছরে অর্ধশত কোটি টাকার মালিক বরিশালের বিআরটিএ সৌরভ” শিরোনামের সংবাদে নানা প্রশ্ন ওঠে। সংবাদটিতে সৌরভ কুমার সাহার নামে-বেনামে ১০টি বাস, প্রাইভেট কার, সিএনজি, জমি এবং অর্ধশত কোটি টাকার সম্পদের মালিকানার অভিযোগ তোলা হয়। অনুসন্ধানে জানা গেছে, উক্ত অভিযোগের কোনো নথিভিত্তিক প্রমাণ নেই। ফরিদপুর জেলা প্রশাসন, বিআরটিএ দপ্তর ও স্থানীয় পরিবহন মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়- সৌরভ কুমার সাহার পরিবারের নামে মাত্র একটি লোকাল বাস ও একটি প্রাইভেট কার রয়েছে। বাসটি ফরিদপুরে লোকাল রুটে চলাচল করে এবং প্রাইভেট কারটি ফরিদপুর রেন্ট-এ-কার সার্ভিসে ব্যবহৃত হয়।
সরকারি গাড়িকে ব্যক্তিগত সম্পদ হিসেবে প্রচার
দাবি করা হয়, সৌরভ কুমার সাহার নামে একটি দামি পাজেরো গাড়ি রয়েছে। কিন্তু অনুসন্ধানে জানা গেছে, উক্ত গাড়িটি আসলে অফিসের সরকারি গাড়ি, যা বিআরটিএর অফিসিয়াল কাজে ব্যবহৃত হয়। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা ও অফিস সহকারী জানিয়েছেন, গাড়িটি সরকারি সম্পদ এবং এটি নিয়মিত অফিসের দায়িত্বে ব্যবহৃত হয়।
কর্মনিষ্ঠা ও সততার কারণে টার্গেট
বরিশাল বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে, সৌরভ কুমার সাহা দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই দপ্তরের বিভিন্ন অনিয়ম ও দালালচক্রের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। তিনি ফিটনেস, লাইসেন্স ও রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রমে স্বচ্ছতা আনতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেন। তার এই উদ্যোগে অনেক অসাধু দালালচক্রের স্বার্থে আঘাত লাগে। ফলস্বরূপ, ওই চক্র তার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার জন্য ভিত্তিহীন অভিযোগ ছড়িয়ে মিথ্যা সংবাদ প্রকাশের পাঁয়তারা শুরু করে।
বিআরটিএর এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,
“সৌরভ কুমার সাহা এমন একজন কর্মকর্তা যিনি নিয়মের বাইরে কাউকে ছাড় দেন না। দুর্নীতিবাজ মহল তাকে বাধা হিসেবে দেখে, তাই তারা বিভিন্নভাবে তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।”
ব্যক্তিগত জীবনে সততা ও সাদামাটা জীবনযাপন
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সৌরভ কুমার সাহা ও তার পরিবার দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ জীবনযাপন করেন। তাঁর বাবা বহু বছর ধরে গাড়ি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত এবং পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা সীমিত। কোনো প্রকার বিলাসবহুল বাড়ি, জমি বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তার নামে পাওয়া যায়নি।
সাংবাদিকরা ফরিদপুরের স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হয়েছেন—সৌরভ কুমার সাহার বাবার নামে একটি পুরনো বাস রয়েছে, যা নিয়মিত লোকাল রুটে চলাচল করে। তাছাড়া, পরিবারের প্রাইভেট কারটি ভাড়ার ব্যবসায় ব্যবহৃত হয়, যা থেকে অল্প আয় আসে।
ভগ্নিপতিকে ঘিরেও মিথ্যা তথ্য
সংবাদে আরও দাবি করা হয়, সৌরভের ভগ্নিপতি স্থানীয় সিএনজি ও অটোরিকশা ব্যবসা দেখাশোনা করেন। কিন্তু অনুসন্ধানে জানা গেছে, তার ভগ্নিপতি নারায়ণগঞ্জের একটি স্বনামধন্য সিমেন্ট কোম্পানিতে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত।
তিনি বরিশাল অঞ্চলে কোনো পরিবহন বা ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করেন না।অতএব, উক্ত দাবি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও বানোয়াট।
নিজের অবস্থান পরিষ্কার করলেন সৌরভ
বিআরটিএ কর্মকর্তা সৌরভ কুমার সাহা বলেন,“আমাকে হেয় করার জন্য একটি মহল সাংবাদিকদের ভুল তথ্য দিয়েছে। সংবাদে যা লেখা হয়েছে, তার কোনো ভিত্তি নেই। আমি সরকারি চাকরিজীবী, আর আমার পরিবারের সব সম্পত্তি মিলিয়েও দুই কোটি টাকার বেশি হবে না।” তিনি আরও বলেন,“আমি কোনো রাজনৈতিক দলের নেতার সুপারিশে চাকরি পাইনি। আমার নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ স্বচ্ছ এবং সরকারি নথিপত্রে তার প্রমাণ রয়েছে।”
অপপ্রচারের নেপথ্যে কারা?
কিছু অসাধু দালালচক্র ও পরিবহন ব্যবসার স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী সৌরভ কুমার সাহার সততা ও কার্যনিষ্ঠার কারণে ক্ষুব্ধ। এই গোষ্ঠী তার বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে বানোয়াট তথ্য সরবরাহ করে বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রকাশ করিয়েছে। তাদের লক্ষ্য ছিল, তাকে প্রশাসনিকভাবে বিব্রত করা এবং পদ থেকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করা